Saturday, September 18, 2010

মুক্ত ভাবনায় মুক্ত সফটওয়্যার দিবস

আজ সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে মুক্ত সফটওয়্যার দিবস। এবারের স্লোগান চেঞ্জ ইজ ফসিবল [ভড়ংংরনষব]! ফস মানে ফ্রি অ্যান্ড ওপেনসোর্স সফটওয়্যার। বাংলাদেশসহ বিশ্বের শতাধিক দেশের ৮০০ প্রতিষ্ঠান একযোগে দিনটি পালন করছে।

কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারগুলোকে চালু করতে এটি সফটওয়্যারের ওপরই মূলত নির্ভরশীল। যে কোনো সফটওয়্যার তৈরি করা হয় বিশেষ ধরনের প্রোগ্রামিং ভাষার মাধ্যমে। বাণিজ্যিক উদ্যোক্তারা প্রোগ্রামিং কোড গোপন রাখেন। তবে প্রোগ্রামের কোডিং গোপন রেখেই যে কেবল মেধাস্বত্ব রক্ষা করা সম্ভব এ মতের বিরুদ্ধেও এখন অনেকেই রয়েছেন। সফটওয়্যারের কোড উন্মুক্ত রেখে এটি তৈরি করতে এবং মুক্ত সফটওয়্যার ব্যবহারে জনসাধারণকে আরও সচেতন করতে এর আন্দোলনও ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। মুক্ত সফটওয়্যার ব্যবহারে জনসাধারণকে সচেতন করতে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় 'সফটওয়্যার ফ্রিডম ডে'।


উন্মুক্ত সোর্স কোড কী : ওপেনসোর্স সফটওয়্যার হলো একেবারেই মুক্ত সফটওয়্যার। যেটি বিনামূল্যে যে কেউ ব্যবহার, অন্যকে প্রদান, সফটওয়্যারের পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং পুনর্বিতরণ করতে পারেন। বাণিজ্যিক সফটওয়্যারগুলোর কোড গোপন রাখা হলেও ওপেনসোর্সভিত্তিক সব সফটওয়্যারের কোড উন্মুক্ত রাখা হয়। এটি ব্যবহারকারীদের দেওয়াই হয় পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং পরিমার্জন করার জন্য। ফলে সফটওয়্যারের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাগুলো ব্যবহারকারীরাই যেমন বের করতে পারেন তেমনি সে সীমাবদ্ধতাগুলোকে দূর করতেও পারেন।
বিশ্বব্যাপী উন্মুক্ত কোডভিত্তিক অসংখ্য সফটওয়্যার ডেভেলপার বা প্রোগ্রামার রয়েছেন। উন্মুক্ত কোনো অ্যাপ্লিকেশনের মূল ডেভেলপাররা যদি কোনো ব্যবহারকারীর পরামর্শ অনুযায়ী ফিচারটি ডেভেলপ বা যুক্ত না করেন তবে অন্য যে কেউ ফিচারটি অ্যাড-অন বা পল্গাগইন হিসেবে যুক্ত করতে পারেন। বাণিজ্যিক সফটওয়্যারে কোনো বাগ বা ত্রুটি দেখা দিলে তা ফিক্স বা সমাধান করতে অনেক সময় প্রয়োজন হয়। কিন্তু মুক্ত সফটওয়্যারে ত্রুটি ধরা পড়লে তা ফিক্স হতে তেমন সময় লাগে না। কারণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে লাখো-কোটি প্রোগ্রামার। তারা ইচ্ছা করলে ব্যক্তিগতভাবে বা যৌথভাবে এ বাগ বা ত্রুটি ফিক্স বা সমাধান করতে পারেন।

সফটওয়্যারের স্বাধীনতা : সফটওয়্যারকে ইচ্ছামতো ব্যবহারই মূলত এর স্বাধীনতা। বাংলাদেশ ওপেনসোর্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান বলেন, 'মোবাইল ফোনে যাকে খুশি তাকে ফোন করার যেমন স্বাধীনতা আছে, ইচ্ছামতো কথা বলার যেমন স্বাধীনতা আছে তেমনি সফটওয়্যারেরও রয়েছে স্বাধীনতা। সফটওয়্যার কীভাবে কাজ করে সেটি জানার স্বাধীনতা যেমন সবার রয়েছে তেমনি এটিকে পরিবর্তন করে নিজের মতো ব্যবহার করার, ভালো লাগা সফটওয়্যার অন্যকে দেওয়ার স্বাধীনতাও থাকার প্রয়োজন রয়েছে।'


মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলন : মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের অধিকার রক্ষা করা। একে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে রূপ দিয়েছেন এর স্রষ্টা রিচার্ড স্টলম্যান। সত্তর দশকের হ্যাকার সংস্কৃতি থেকে এ দর্শনকে আরও বাস্তবনির্ভর করতে মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলন শুরু করেন স্টলম্যান। তরুণ স্টলম্যান যে স্বপ্ন নিয়ে তার এ সামাজিক আন্দোলনের যাত্রা শুরু করেছিলেন তার সে স্বপ্ন আস্তে আস্তে পূরণের পথেই এগোচ্ছে। পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এ আন্দোলন। দিন দিন বাড়ছে মুক্ত কোডিংয়ে তৈরি সফটওয়্যারের সংখ্যা। আজ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলংকার মতো দেশগুলোও পালন করছে দিনটি।
মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে এর সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। সাধারণ কম্পিউটিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব বাণিজ্যিক সফটওয়্যারের বিকল্প ওপেনসোর্স সফটওয়্যার তো আছেই, এমনকি অ্যাডভান্স কম্পিউটিংয়ের অনেক সফটওয়্যারও এখন উন্মুক্ত সোর্স কোডভিত্তিক। কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে উইন্ডোজ এবং ম্যাকেনটোসের বিকল্প হিসেবে রয়েছে লিনাক্স, উবুন্টু এবং ফেডোরার মতো অপারেটিং সিস্টেম। লেখালেখির সফটওয়্যার মাইক্রোসফট অফিসের বিকল্প হিসেবে রয়েছে ওপেনসোর্স ওপেন অফিস। ছবি সম্পাদনার জন্য অ্যাডোবি ফটোশপের বিকল্প হিসেবে রয়েছে জিআইএমপি। ওপেনসোর্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমগুলোতে উইন্ডোজের চেয়ে সুবিধাও অনেক বেশি। এতে কোনো ভাইরাস আক্রমণ করে না। একইসঙ্গে আলাদা করে কোনো ড্রাউভার ইনস্টলেশনের ঝামেলাও নেই। অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করার সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভারগুলোও ইনস্টল হয়ে যাবে। অ্যাডভান্স কম্পিউটিং সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে ওয়েবসার্ভার অ্যাপাচি, মেইল সার্ভার সেন্ডমেইল ও কিউমেইল, ব্রাউজার মজিলা ফায়ারফক্স তো রয়েছেই।

বাংলাদেশে মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলন
কম্পিউটারের সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে পেঁৗছানোর জন্য মায়ের ভাষায় কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হবে। বাণিজ্যিক সফটওয়্যারগুলোর সোর্সকোড অন্য কেউ জানতে পারে না বলে ওই সফটওয়্যারের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে অন্য ভাষায় অনুবাদ না করে দিলে সেটি মায়ের ভাষায় ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। তবে ওপেনসোর্স সফটওয়্যারগুলোর সোর্সকোড উন্মুক্ত থাকে বলে যে কেউ নিজের ভাষায় এটি অনুবাদ করে নিতে পারেন। মুনির হাসান বলেন, 'উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম বাংলায় ব্যবহার করার জন্য আমাদের চেয়ে থাকতে হয় মাইক্রোসফট কখন এর বাংলা সংস্করণ বাজারে ছাড়বে। কিন্তু ওপেনসোর্সে এ সীমাবদ্ধতা নেই। যে কেউ ইচ্ছামতো এটি অনুবাদ করে নিতে পারেন।' আমাদের দেশে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অঙ্কুর নিজ উদ্যোগে বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ওপেনসোর্স সফটওয়্যার বাংলায় অনুবাদ করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনুবাদ করা সফটওয়্যার হচ্ছে লেখালেখির অ্যাপিল্গকেশন ওপেন অফিস [যঃঃঢ়://নহ.ড়ঢ়বহড়ভভরপব.ড়ৎম] ইন্টারনেট ব্রাউজার মোজিলা ফায়ারফক্স [যঃঃঢ়://ভরৎবভড়ী.বশঁংযবু.ড়ৎম]. এছাড়াও লিনাক্সের প্রচলিত ডেস্কটপ, লিনাক্স ও তার অ্যাপিল্গকেশনগুলোর বাংলা অনুবাদ, সুসি লিনাক্স ও তার অ্যাপিল্গকেশনগুলোর বাংলা অনুবাদ, রেডহ্যাট/ফেডোরা লিনাক্স ও তার অ্যাপিল্গকেশনগুলোর বাংলা অনুবাদ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

উন্মুক্ত দিনের আয়োজন : সফটওয়্যার ফ্রিডম ডে উপলক্ষে বাংলাদেশ ওপেনসোর্স নেটওয়ার্ক আয়োজন করেছে বেশ কিছু কার্যক্রম। এর মধ্যে রয়েছে উন্মুক্ত সোর্সকোড নিয়ে সেমিনার, আলোচনা ও প্রদর্শনী। আজ বিকেল ৪টায় ছবিরহাটে [চারুকলা ইনস্টিটিউটের উল্টো পাশে] বিশেষ আড্ডার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ লিনাক্স ব্যবহারকারী কমিউনিটি। সারাদেশ থেকে অনেক লিনাক্স ব্যবহারকারী যোগ দেবেন এ আড্ডায়। লিনাক্স ফোরামের প্রশাসক আশিকুর রহমান অ্যাঞ্জেল জানান, আড্ডায় সফটওয়্যার ফ্রিডম ডে উপলক্ষে বিভিন্ন আলোচনা করা হবে। লিনাক্স ফোরামের ব্যবহারকারী ছাড়াও যে কেউ এতে যোগ দিতে পারবেন। ঢাকার বাইরেও লিনাক্স ফোরামের পক্ষ থেকে এ ধরনের আয়োজনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

No comments: